ব্ল্যাকআউট বা নিষ্প্রদীপ (ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শব্দ)
আপনারা সবাই জানেন ২০১৪ সালের নভেম্বরের ১ তারিখে পুরো বাংলাদেশে একযোগে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । এবং আমরা পুরো দেশের সকল মানুষ প্রায় ১০ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকি ।
এর মূল কারণ ভারত(বহরমপুর) থেকে আমরা যে বিদ্যুৎ কিনে আমাদের দেশে ব্যবহার করতাম সেটা ফেইল করেছিল । প্রসঙ্গত আমরা কুষ্টিয়া ভেড়ামারা দিয়ে ভারত থেকে বিদ্যুৎ কিনে ব্যবহার করি ।
ভারত থেকে ৪০০ কিলোভোল্ট এর ৪৪৫ মেগাওয়াট এর লাইন টি কুষ্টিয়া ভেড়ামাড়ায় সংযোগ দেয়া আছে ।
ব্ল্যাকআউট এর কারণ হিসেবে যেটা বলা হয়েছিল সেটা ছিল একটা চেইন রিঅ্যাকশন এর মত ।
মানে যখনই ভারতের ৪৪৫ মেগাওয়াট এর লাইনের পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় , সাথে সাথেই সেই ৪৪৫ মেগাওয়াট এর চাপটা ন্যাশনাল গ্রিড এর অন্য যে সকল পাওয়ার স্টেশন ছিল সেগুলোতে ফোর্স ক্রিয়েট করে এবং সেই ফোর্স না সামলাতে পেরে অন্য পাওয়ার স্টেশন গুলোও ফেইল করে ।
যখনই আর একটা পাওয়ার স্টেশন ফেইল করে অন্য গুলোতে আরো বেশি চাপ পড়ে এবং এভাবেই প্রায় ঐ ন্যাশনাল গ্রিড এর সকল স্টেশন গুলোই ফেইল করে ।
ব্ল্যাকআউট ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সত্যিই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ এর বিষয় ।
আসুন এবার ব্ল্যাকআউট সর্ম্পকে ইঞ্জিনিয়ার দের মত করে জানি !!!
--পাওয়ার গ্রিড একটা দেশের জন্য, ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য খুবি সেনসিটিভ বিষয় ।।
== কত খানি পাওয়ার জেনারেশন হচ্ছে , কত খানি লোড বা ডিমান্ড আছে এই দুইটা জিনিসের ব্যলান্স টা সবচেয়ে বেশি জরুরী ।।। এবং পাওয়ার স্টেশন বা ন্যাশনাল গ্রিড এর ইঞ্জিনিয়ার রা এই লোড এবং জেনারেশন এর ব্যলান্স সব সময়ই করে থাকে এবং ন্যাশনাল গ্রিড এর ফ্রিকোয়েন্সি ৫০ রাখার চেষ্টা করে । যদিও অনেক সময় ১/২ প্লাস মাইনাস হয় , তারপরও নেয়ার অ্যাবাউট ফ্রিকোয়েন্সি ৫০ ই থাকে ।
== এখন যদি কোনো কারণে লোড ও জেনারেশন এর মধ্যে ইমব্যালান্স দেখা দেয় তখনি ফ্রিকোয়েন্সি এর পরিবর্তন ও অটোমেটিক্যালি হয়ে থাকে ।
== যদি কোনো জেনারেটর ফেইল করে , তাহলে সাথে সাথেই জেনারেশন অনুযায়ী লোড এক্সিড করে থাকে, এবং ফ্রিকোয়েন্সী ড্রপ হয় । যদি এই পাওয়ার জেনারেশন ড্রপ টা কম পরিমানে হয়, তবে ন্যাশনাল গ্রিড তার কাজ তবু চালিয়ে যায় লোডশেডিং বা রির্জাভ থেকে পাওয়ার সাপ্লাই দিয়ে । কিন্তু যদি পাওয়ার ড্রপ টা অনেক বেশি পরিমানে হয়ে থাকে , যেমনটা হয়েছিল ভারত-বাংলাদেশ ৪৪৫ মেগাওয়াট এর লাইন ; তবে এই বিশাল পরিমান পাওয়ার খুব দ্রুত রিকভার করা সম্ভব হয় না । যার ইফেক্ট অন্য জেনারেটর গুলোতে পড়ে, অভার লোড এর কারণে ব্ল্যাকআউট এর মত ঘটনা ঘটে ।
== আবার এরকম ও হতে পারে, যেমন বড় ধরনের লোড একসাথে বন্ধ হয়ে গেল; তখন এক্সেস জেনারেশন এর কারণে ফ্রিকোয়েন্সি বুস্ট করবে এবং এটার প্রভাব গ্রিড এর সব পাওয়ার স্টেশনেই পড়বে ।। যদিও এরকম ঘটনা খুব কমই ঘটে ।।
== কুষ্টিয়া ভেড়ামাড়ার ক্ষেত্রে ফ্রিকোয়েন্সি ৪৫ সাইকেল পার সেকেন্ড এ চলে এসেছিল এবং একটা বড় ধরণের ইলেকট্রিক্যাল সার্জ পুরো সিস্টেমটাকে ইফেক্ট করে ফেলেছিল ।
++ আসুন এবার পুরো বিশ্বের কিছু বড় ধরণের ব্ল্যাকআউট এর ঘটনা সর্ম্পকে জানি !!
১) ব্ল্যাকআউট-২০০৩, ইটালি !!
-- ২৮ সেপ্টেম্বর,২০০৩. ইটালিতে ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটে ।।
-- এফেক্টেড হয়েছিল ৫০ মিলিয়ন জনগন!!
২) ব্ল্যাকআউট-২০০৬, জার্মানি !!
-- ০৪ নভেম্বর-২০০৬.
১০০০ হাজার মেগাওয়াট এর উইন্ড টারবাইন এর কারণে ঘটনাটা ঘটেছিল ।
পরিশেষে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আমরা কখনোই ব্ল্যাকআউট কে অ্যাভোয়েড করতে পারিনা, কারন লোড এবং জেনারেশন সব আমাদের মানুষ এর দ্বারাই তৈরি , এবং আমরাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকি; তবে অতিরিক্ত সচেতনতা বা বিকল্প পদ্ধতি রেডি থাকলে এ ধরণের বড় ধরণের ব্ল্যাকআউট থেকে আমরা দুরে থাকতে পারি !!!!
আরো একটি কথা !!!
উই আর ইঞ্জিনিয়ার ,
উই পাওয়ার দ্যা ওয়ার্ল্ড !!!
উই দ্যা রিআল এনার্জি !!!
No comments:
Post a Comment